ঢাকা, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:৪৪ অপরাহ্ন

দেশে মহামারীর দ্বারপ্রান্তে ডেঙ্গু

denguদেশে প্রতিদিনই ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাজধানীর কোনো কোনো পরিবারের সব সদস্যই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে ডেঙ্গু রাজধানীর সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেছে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল বিভাগে। রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ইতিমধ্যে দেশে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে একে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

ডেঙ্গুর এই অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিকে ভয়াবহ হিসেবে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে সেটিকে পুরোপুরি মহামারী বলা না হলেও এর দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। অর্থাৎ যে কোনো সময় এর বিস্তার মহামারীতে রূপ নিতে পারে। এখনই জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। কারণ বছরের এই দুই মাস থেমে থেমে বৃষ্টি হয়।

এতে অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যায়। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা এডিস নিয়ন্ত্রণে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন যখন ব্যর্থ হয়েছে, তখন বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিদেশ থেকে জিনোটাইপ মশার ডিম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে অধিদফতর।এই ডিম থেকে জন্ম নেয়া জিনোটাইপ মশা এডিসের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করবে। এতে স্বাভাবিক কারণেই ডেঙ্গুর বিস্তার কমে আসবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ দিনে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ হাজার ৬৩৭ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মৃত্যু ঘটেছে ৫ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৪৭৩ জন।

তবে বেসরকারি হিসাবে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। সবমিলিয়ে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও এখনই এটাকে পুরোপুরি মহামারী বলতে নারাজ বিশেষজ্ঞসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি অবশ্যই আউটব্রেক (প্রাদুর্ভাব)। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরেকটু বেড়ে গেলে সরকারিভাবেই ডেঙ্গুকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হতে পারে।

ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে মানুষকে বাঁচাতে ইতিমধ্যে চিকিৎসকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে পকেটবুক আকারে গাইডলাইন। যাতে তারা (চিকিৎসক) ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে পারেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ সাধারণ ও মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বর্তমানে প্রতি বছর মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গুজ্বরে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। প্রতি মিনিটেই বিশ্বের কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাদের অধিকাংশই শিশু। আক্রান্তদের মধ্যে বছরে ২২ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়।

নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন