শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। তবে নিম্নাঞ্চলের ১০টি গ্রামের মানুষ আজও পানিবন্দি রয়েছে। এ সব লোকজন এক সপ্তাহ ধরে দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল, কাকিলাকুড়া, তাতিহাটি ও গোপালপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে বন্যা কবলিত লোকজনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দুর্ভোগের চিত্র পাওয়া যায়। অনেক গ্রামে এখনও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি।
শেরপুর জেলায় বন্যায় এ পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ৫০ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ও ১১শত হেক্টর জমির সবজি। জেলায় কৃষিতে অন্তত ৬০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আব্দুর রউফ মিয়া জানান, জেলায় বন্যায় সাড়ে ৬ হাজার গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ অন্তত সাড়ে ১০ কোটি টাকা। পানিতে কমপক্ষে ৭ হাজার পুকুর ও মাছের খামারের মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা।
বন্যার দুর্গত এলাকায় সুপেয় পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও খড়ের গাদা পানিতে নষ্ট হওয়ায় গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার মানুষ।
শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নের পশ্চিম বাঘহাতা গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যায় তাদের বাড়িঘরে পানি ওঠে। ছেলে-মেয়ে ও শিশু সন্তান নিয়ে তারা উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়। পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে যায়। পানিতে তলিয়ে যায় আমন ধানের ক্ষেত। চার দিন পর বাড়ি ফিরলেও চূলায় পানি থাকায় রান্না করতে পারছেন না। খড়ের গাদা পানিতে নষ্ট হওয়ায় গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের চেঙ্গুতার এলাকার আমিন হাওলাদার বলেন, ‘পোলাপান নিয়ে মেলা কষ্টে আছি। সরহার ত্রাণ দিতাছে, আমরা ত্রাণ পাই না। কেউ আমগোর খোঁজও নেয় না।’
রানীশিমুল ইউনিয়নের ভাগহাতা গ্রামের রহিমুদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এখনও ঘরে ফেরা হয়নি। ঘর ভেঙে গেছে। মানুষ রাস্তায় পাশে যাদের বাড়ি শুধু তাদের ত্রাণ দেয়। আমরা না খেয়ে থাকি, আমাদের ত্রাণ দরকার। ঘর তৈরির টিন দরকার।’
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাবের আহমেদ বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে ত্রাণ দেওয়ার ব্যবস্থা করব। জেলা প্রশাসন থেকে তালিকা সাপেক্ষে টিন ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে।