এখনো বাংলাদেশের অনেক জায়গায় আতিথেয়তার অন্যতম উপকরণ পান, সুপারি ও চুন। আবার কেউ পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের শেষে পান দিতে ভুল করেন না। রুচি অনুযায়ী পান, সুপারি ও চুনের সংমিশ্রণের সঙ্গে জর্দা যুক্ত করে থাকেন অনেকে। কিন্তু এই পানের অন্যতম উপকরণ চুন তৈরির কারিগরদের এখন দুর্দিন।
ঝালকাঠি শহরের পশ্চিম চাঁদকাঠি (বাসন্ডা ব্রিজ সংলগ্ন) এলাকায় শামুক ও ঝিনুক দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে চুন তৈরি করা হয়। কারিগরদের কর্মযজ্ঞ ও নান্দনিকতা দেখলে শৈল্পিক দিকটিও ফুটে ওঠে। এজন্যই চুন তৈরির সব প্রক্রিয়া মিলে চুনকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও অবাধে অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগের ফলে প্রজনন তো দূরের কথা জীবন ধারণই বিপন্ন হচ্ছে শামুক ও ঝিনুকের।
বংশ বিস্তার না হওয়ায় সামুদ্রিক শামুক-ঝিনুকের ওপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে চুন শিল্পীদের। অতিরিক্ত মূল্য, পরিবহন খরচ, মধ্যস্বত্বভোগীসহ কয়েক হাত ঘুরে চুন তৈরির কারিগরদের কাছে এসে কাঁচামাল পৌছায়। কারিগরদের পারিশ্রমিক ও প্রক্রিয়াজাতকরণসহ যে পরিমাণ খরচ হয়, সেভাবে বিক্রয় মূল্য পোষানো যাচ্ছে না। তাই পৈতৃক পেশা টিকিয়ে রাখতে কোনোমতে জীবনযাপন করছেন চুনারুরা (কারিগর)।
ঝালকাঠি শহরের পালবাড়ি ও বাউকাঠি এলাকার কিছু পরিবার কারিগরদের নিয়ে আজও ধরে রেখেছেন এ পেশা। নানা অভাব-অনটনের মাঝে প্রায় ২০টি পরিবার এ পেশায় টিকে আছে। কারিগররা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কৃষি জমিতে কীটনাশক ব্যাবহারে শামুক-ঝিনুক কমে গেছে। কাঁচামালেরও দাম বেড়েছে। তাই লোকসানের মুখে এ পেশা ছেড়েছেন অনেকে।