মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মোকাবিল সীমান্তের ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে ডুবে যায় ভাটির নিম্নাঞ্চল। আকস্মিক বন্যায় ডুবে যায় মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও পাকা সড়ক। এরমধ্যে উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামটি গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের জন্য সবার কাছে পরিচিত। আশপাশের এলাকাতেও এই ধরনের টমেটো চাষাবাদ হয়। কিন্তু কৃষকের সেই স্বপ্নের জমিতে এখন শুধু বানের জলে ভেসে আসা বালির স্তূপ। এই ফসলি জমি কবে চাষাবাদের উপযোগী হবে সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কৃষকের।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত তিনটি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। বন্যার পানির সঙ্গে আসা বালির স্তূপে ভরে গেছে ফসলের জমি।
কথা হয় ইসলামপুর গ্রামের টমেটোচাষি কুমেল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, দুই লাখ টাকা খরচ করে চারা লাগিয়েছিলাম। বন্যার পানিতে সব ডুবে মরে গেছে। নিঃস্ব হয়ে গেলাম। বন্যা সব নিয়ে গেলো। তার মতো একই অবস্থা দুই ইউনিয়নের কয়েকশো চাষির।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৩৫ হাজার ১২৭ হেক্টর আউশ, ৮২ হাজার ৪৬৫ হেক্টর রোপা আমন, ৫ হাজার ১০৯ হেক্টর বিজতলা ও ৫৫০ হেক্টর জমিতে শাক সবজি আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ৬৭২ হেক্টর আউশ জমি, ২৫ হাজার ৩৫৭ হেক্টর রোপা আমন, ১৫৬ হেক্টর বিজতলা ও ২৬৮ হেক্টর জমির শাকসবজি। শাকসবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে লাগানো টমেটোর চারা।
ইসলামপুর ইউনিয়নের আট গ্রামের শতাধিক চাষি গ্রাফটিং পদ্ধতিতে লাগানো টমেটোর চারা বিক্রি করে সংসার চালান। আবার চাষও করেন। উৎপাদিত টমেটো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়। কিন্তু সম্প্রতি বন্যায় উপজেলার ১০ গ্রামের ৩৫৪ চাষির প্রায় ৩২ লাখ টমেটোর চারা মাঠে নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে দুই ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক চাষির ক্ষতির পরিমাণ ছয় কোটি টাকা বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় কৃষি গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, বনগাঁও গ্রামের ঘরে ঘরে তৈরি হয় গ্রাফটিং টমেটোর চারা। নার্সারি করে চারা উৎপাদন ও টমেটো চাষ গ্রামের মানুষের আয়ের বড় উৎস। বনগাঁওয়ের মতো উপজেলার অনেক গ্রামে বেগুনের চারার সঙ্গে টমেটোর গ্রাফটিং চাষ হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। টমেটো চাষে অনেকের ভাগ্য বদলে গেছে। এ বছর ব্যাপকহারে চারা উৎপাদন ও ফলন হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যায় তাদের সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। শত শত চাষি নিঃস্ব হয়েছেন। ক্ষতি পুষিয়ে মাঠে ফেরার আর্থিক অবস্থা নেই কারো। বিভিন্ন এনজিও ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে করা টমেটো চাষ হারিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন চাষিরা।